অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ভোলার দৌলতখান উপজেলার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দিদারউল্লাহ গ্রামের বাসিন্দা মোখলেছুর রহমান। জমি নিয়ে তার সঙ্গে প্রতিবেশীর বিরোধ রয়েছে। এরই জেরে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা ও ছিনতাই মামলা করেছেন ওই প্রতিবেশী। ওই মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে মোখলেছুর রহমানের ছোট ছেলে সাড়ে ছয় বছরের শাকিলকে।
মামলার পর থেকে বাবার কোলে চড়ে আদালতের বারান্দায় ঘুরতে হচ্ছে শিশুটিকে। হয়রানিমূলক এ মামলা থেকে শিশু শাকিলকে অব্যাহতি দিতে আদালতের প্রতি আবেদন জানিয়েছে শিশুটির পরিবার।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিশু শাকিলের বাবা মোখলেছুর রহমানের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে তাদের প্রতিবেশী আব্দুল মান্নানের ২ একর ১০ শতাংশ জমিজমা নিয়ে দ্বন্দ চলে আসছিল। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের এপ্রিলে ভোলার দৌলতখান সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন প্রতিপক্ষ আব্দুল মান্নান। ওই মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে মোখলেছুর রহমানের ছোট ছেলে শিশু শাকিলকে। শিশুটি স্থানীয় একটি মাদরাসার প্রথম শ্রেণির ছাত্র।
মামলায় শিশু শাকিলের বয়স ২০ বছর উল্লেখ করে বলা হয়, শাকিল লোহার রড দিয়ে প্রতিপক্ষকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় আঘাত করেন। তার নেতৃত্বে প্রতিপক্ষদের নারীদের স্বর্ণালঙ্কার ছিনতাই এবং এক নারীর শ্লীলতাহানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়। মামলায় গ্রেফতার এড়াতে শিশুটির বাবা হাইকোর্ট থেকে চার সপ্তাহের জামিন নিয়েছেন।
শিশু শাকিলের বাবা মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘আব্দুল মান্নানের সঙ্গে আমার দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ রয়েছে। আমাদের হয়রানি করতে তিনি আমার সাড়ে ছয় বছরের শিশু শাকিলকে প্রধান আসামি করে মামলা দিয়েছেন। ওই মামলায় হাইকোর্ট শিশু শাকিলকে চার সপ্তাহের জামিন দেন। সে জামিনের মেয়াদ শেষে ভোলা আদালত জামিন দিয়েছেন। মামলা থেকে আমার নিষ্পাপ ছেলের মুক্তি চাই।’
শিশুটির মা রুনু আক্তার বলেন, ‘এখন শাকিলের স্কুলে যাওয়ার, পড়াশোনা ও খেলাধুলার করার বয়স। অথচ প্রতিপক্ষের মামলায় ছেলেকে নিয়ে আদালতের বারান্দায় ঘুরতে হচ্ছে। আমরা এ মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি চাই।’
মোখলেছুর রহমানের প্রতিবেশী হাসান আহমেদ বলেন, আব্দুল মান্নান অনেকের সঙ্গেই ঝগড়া-ঝামেলা করেন। তার সঙ্গে কেউ পেরে উঠতে পারছেন না। তার কারণে আমরাও অতিষ্ঠ।
এ বিষয়ে মামলার বাদী আব্দুল মান্নানের দাবি, ভুলবশত মোখলেছুর রহমানের বড় ছেলে মেহেদী হাসান শাকিবের নামের জায়গায় কম্পিউটারের ভুলে ছোট ছেলে শাকিলের নাম এসেছে।
মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবী আদিল মাহামুদ রোম্মান বলেন, সাড়ে ছয় বছরের শাকিলের বয়স ২০ বছর দেখিয়ে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলা করেছেন বাদী। শিশুর পক্ষে এমন একটি অপরাধের নেতৃত্বে দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে শাকিলসহ তার বাবা মোখলেছুর রহমান, দাদা আব্দুল খালেক ও চাচা মাহে আলম পুলিশ রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে আছেন। আমাদের আশা, আদালতে শাকিল ন্যায় পাবে। তবে এ মামলায় আগামী ২ আগস্ট আবারও ভোলার আদালতে এসে হাজিরা দিতে হবে শিশু শাকিলকে।
ভোলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রিপন চন্দ্র সরকার বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে পুলিশ আদালতে একটি তদন্ত রিপোর্ট পাঠাবে। মামলা থেকে শিশুটি অব্যাহতি পাবে বলে আশা করি।
Leave a Reply